এক শ্রেণির লোক দিনে দশ-বিশ ঘণ্টা পড়াশোনার করতে যে ধৈর্য দরকার তা অর্জন করতে জানেন না। তারা মাথা খাটাবার মতো কঠিন কাজে অভ্যস্ত নন। তাদের গণিত শিখতে দিলে, শিখবে না। সারাদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে দিলে, করবে।
দারুণ একটা গল্প লিখে ফেলা, অসাধারণ একটা কার্টুন করে ফেলা বা স্যাটায়ার লিখে ভাইরাল হয়ে যাওয়া কোন দুর্ঘটনা থেকে হয় না। অত্যন্ত কালচারাল লোকজন এসব পারেন। অর্থাৎ যেসব বই পড়তে কষ্ট হয় তা পড়তে জানা লোকেরা কাজের স্যাটায়ারটি করতে পারেন। কাজের কার্টুনটি আঁকতে পারেন, গল্প লিখতে পারেন বিশ্বমানের।
পড়াশোনা করতে চায় না, অলস, অঙ্ক দেখলে দাঁত কপাটি লেগে যায়, দাঁতভাঙা গবেষণাপত্র দেখলে বাথরুমে যাওয়া বেড়ে যায় - এমন মানুষ দিয়ে ফাটাফাটি শিল্প আশা করা কঠিন। কম পড়াশোনা করা লোকও শিল্প করতে পারেন, তবে তাদের কম পড়াশোনার পেছনের কারণ আলস্য নয়, সুযোগের অভাব।
ফেসবুকে কমেন্টবক্সে আপনারা ছাগলের মতো চিল্লাতে দেখবেন এইসব পড়াশোনা থেকে দূরে থাকা লোকজনকে। পছন্দের জিনিসের বাইরে বই পড়ার অভ্যাসই নেই। কষ্ট হয় এমন ভাবনা ভাবার অভ্যাসই নেই। কাজেই এরা কখনো সুশীল সমাজের সাথে পেরে ওঠেন না। পারার কথা নয়। এজন্য একজন নিস্ফল আক্রোশে লিখেছিলেন, "আমরা কেন নিজেদের কার্টুন আঁকছি না, ওদের মতো পারছি না?"
এখানে দুষ্টচক্রের ব্যাপার আছে।
ইসলামের এবং শাহাদাতের জজবায় বেচাইন কিছু তরুণ একসময় মনে করতে থাকেন এসব নাস্তিক(!)দের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য তারা পড়াশোনা শুরু করবেন। করেনও।
তারপর তারা কুরআনটা খোলার পাশাপাশি ইতিহাসের বইও খোলেন। হাদীসটা খোলার পাশাপাশি অন্যান্য মতামতও খোলেন। তারপর ইনারা জ্ঞানের সাগরে পয়লাবার জিভটা ঠেকান। ধীরে ধীরে তারা বুঝে ফেলেন ধর্মের নামে তাদের বকরি বানানো হয়েছে। এনাদের কলমের ধার বাড়ে।
সেই ধারে কাটা পড়ে খোদ ইসলাম। কিংবা হিন্দুত্ববাদ। কিংবা খ্রিস্টানধর্ম।
যেই ইসলামের তলোয়ার হওয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করলো, জ্ঞানার্জনের পর বুঝলো সে ছিল ফ্যাসিবাদের যন্ত্র, অমনি তার তলোয়ারে কাটা পড়ে খোদ ইসলাম। আমাকে দেখুন, অধিক কুরআন ও হাদীস পড়াই আমার জন্য কাল হয়েছে। এই পড়াশোনা শুরু করেছিলাম নাস্তিকদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য।
২০১৩-১৪ সালে আমার কাজ ছিলো অনলাইনে নাস্তিকদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া। পড়াশোনা করতে শুরু করার পর বুঝলাম দোষ নাস্তিকের না। উনারা যা বলেছেন অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলেছেন। দোষ আমারই। আমি জানতাম কম। আমি ছিলাম বোকাচোদা।
গতকাল এক গ্রুপের কমেন্টে আমাকে বলা হলো, "দেখুন আপনি মনে করছেন আপনিই সঠিক তাহলে তো হলো না। পরিবর্তনের চিন্তা তো থাকতে হবে-"
ইনারা জানেন না অতো বড়ো ইগো আমার নেই যে নিজের ভুল বুঝতে পারবো না। আমি উনাদের মতই ছিলাম। নিজের ভুল বুঝতে পেরেই এখনকার আমি হয়েছি। আর কেউ যদি এখনকার আমাকে ভুল ধরিয়ে দেন তাও আমি শুধরে নেই।
জ্ঞানের দুষ্টচক্র এটাই।
আপনি আপনার ধর্মকে বাঁচাবার জন্য পড়াশোনা শুরু করলেই বুঝতে পারবেন, পৃথিবীর সবাই আপনার ধর্মকে আক্রমণ করছে না। তারা স্রেফ সত্যটা বলছে।
কুরআন পড়ুন।
হাদীস পড়ুন।
নাস্তিকদের লেখা পড়ার দরকার নেই।
কুরআন আর হাদীসের অর্থসহ পাঠই আপনার ঈমানের বারোটা বাজিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।