ওয়ার অন টেরর : কাদের বিরুদ্ধে ওয়ার?
মানুষের আইডি যারা ডিজেবল করে এমন একজন মানুষ টেলিগ্রামে বলার চেষ্টা করল সে জঙ্গি না, সে শুধুমাত্র ইসলামবিদ্বেষীদের আইডি ওড়ায়।
এটা একটা মজার বিষয় যে অনেক জঙ্গি নিজে জানেও না যে সে জঙ্গি। বর্তমান বিশ্বে শুধু মাত্র মানুষের মাথা কেটে ফেলাই একমাত্র যুদ্ধের জায়গা না। যেকোনো যুদ্ধে এখন দুটো দিক থাকে।
মিলিটারি উইং বন্দুক এবং গায়ের জোরে প্রমাণ করে যে তাদেরকে ছাড়া অন্য কোন পথ ধরলে মেরে ফেলা হবে। নাস্তিকের মাথা কেটে ফেলার বাহিনীটা হচ্ছে মিলিটারি উইং। মেয়েদের জামা ছোট বলে গায়ে হাত তোলা বাহিনীটা হচ্ছে মিলিশিয়া উইং, অর্থাৎ মাথা-কাটা-পার্টি পাকিস্তানি মিলিটারি। মেয়ের জামা তুলে তাকে হ্যারাস করতে আসা ‘জনতা’ হচ্ছে রাজাকার। উভয়ই মিলিটারি উইংয়ের অংশ। দেশ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গেলে ‘আপু-হিজাব-কই’কে দেখবেন রাইফেল নিয়ে দৌড়াচ্ছে।
এরা যখন ত্রাসের তাণ্ডব চালাচ্ছে, নাস্তিকের মাথা কাটছে, মেয়েদের জামা নিয়ে হ্যারাস করছে, রোজার সময় কেউ খেলে তাকে মারছে-পিটছে, তখন আমাদের ওয়াজি, অনেক মসজিদের ইমাম এবং লোকাল ইসলামিক নেতারা মুখে ভালো ভালো কথা বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম” প্রভৃতি। এদের বলা হয় ইনটেলেকচুয়াল উইং৷
এর বাইরে তৃতীয় আর একটা উইং থাকে যাদের কাজ হচ্ছে এই মতাদর্শের বাইরে, বিশেষতঃ এই মতাদর্শের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তাদেরকে সাইডে চাপিয়ে দেওয়া। কারণ ওই ওপরের দুই উইং অ্যাকটিভ থাকার পরও যদি বিরুদ্ধমত মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে যায়, তাহলে আপনি মানুষের মাথা কেটে এবং ইসলামী বক্তাদের দিয়ে ভালো ভালো কথা বলিয়েও খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। নাস্তিকের মাইক এজন্য কেড়ে নেওয়ার এত প্রচেষ্টা। সেকুলারদের বিরুদ্ধে এজন্য এত আলাপ। এলজিবিটিকিউ আদতে মূল ইস্যু নয়, বরং ওটা যারা তোলে তারা আরেকটা উইংকে ফুয়েল করার জন্য এরকম দু’চারটে কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করেন। এই উইং সমস্ত ফেসবুক প্রোফাইল ডিজেবল করে, ওয়েবসাইট রিপোর্ট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। কারো ক্ষেত্রে ‘নাস্তিকতা প্রচার’ হয় জাস্টিফিকেশন, কারো ক্ষেত্রে ‘এলজিবিটিকিউ সমর্থন’ এবং কারো ক্ষেত্রে ‘অনলাইনে উলঙ্গ থাকা বা নগ্নতার প্রচার’ হয় ব্যাখ্যা। এদেরকে বলা হয় প্রোপাগান্ডা উইং।
আপনারা যারা ভাবছেন যে ‘আমরা তো শুধু রিপোর্ট করে নাস্তিকের পেজ ওড়াই’ আপনারা জঙ্গিবাদের প্রোপাগান্ডা উইংয়ের অংশ।
আপনাদের গুরুরা আপনাদের কী বলেছে আমি জানি না, কিন্তু মূলত আপনাদের কাজ হচ্ছে পুরো পৃথিবীর কাছে দেখানোর চেষ্টা করা ইসলামের বিরুদ্ধে এই এলাকা থেকে আর কোন রব উঠছে না।
War on Terror এ আপনারা তিন উইংয়ের লোকই কাটা পড়বেন।
হয় গুলি খেয়ে মরবে, নয় ফাঁসীর দড়িতে ঝুলবেন। বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে আমরা লিবারেলরা কেবলমাত্র ইনটেলেকচুয়াল উইংকে জেইল ফ্রি কার্ড দেয়ার চেষ্টা করবো। মিলিটারি উইং আর প্রোপাগাণ্ডা উইং নিঃসন্দেহে মরবেন।
আপনি চায়ের দোকানে আপুকে রোজা নিয়ে লেকচার দিতে গেছেন ঈমানী দায়িত্ব পালনে - বলে বাঁচবেন না। আপনাকে প্যারামিলিটারি হিসেবেই ট্রিট করা হবে।
আপনি বাসায় বসে বসে নাস্তিকের পেইজ ও প্রোফাইল উড়িয়েছেন ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে- এসব বলেও বাঁচবেন এমন মনে হয় না। আপনাকে প্রোপাগাণ্ডা উইংয়ের লোক হিসেবেই ট্রিট করা হবে।
যার ঈমান এই পর্যায়ে আছে, তারা নিঃসন্দেহে জঙ্গি। জঙ্গি বলে সাধারণত এমন গোষ্ঠীকে বোঝানো হয় যারা সহিংসতা, ভীতি এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এজন্য বর্তমান পৃথিবীতে খেলাফতপন্থী ছাড়া জঙ্গি নেই বললেই চলে। কোন লোক বন্দুক নিয়ে কনসার্টে গিয়ে ফায়ার ওপেন করে দিলেই সে জঙ্গি হয় না। তার একটা আদর্শ থাকতে হয়, তার সেই আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্য বাদে আর কোন উদ্দেশ্য ছাড়া তাকে গুলিটা চালাতে হয়। কিংবা, ফেসবুক প্রোফাইল ডিলেট করতে হয়। কিংবা আপু রোজার মধ্যে চা খাচ্ছে কেন সেই মর্মে গিয়ে বাগড়া দিতে হয়।
শত্রু সব সময় স্পষ্ট। আপনার ঈমানের অবস্থা যদি ঐ পর্যায়ে থাকে যে ভয় দেখিয়ে, আইডি উড়িয়ে, কমেন্টে গালাগাল করে আপনি আপনার মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চান, আপনি ডাউনরাইট জঙ্গি।
আপনি সেটা জানেন কিংবা না জানেন, তাতে কিস্যু আসে যায় না।